লটকনের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও সতর্কতা এবং লটকন কিভাবে খায়
প্রিয় বন্ধুরা, আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো লটকনের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও সতর্কতা এবং লটকন কিভাবে খায় এসব সম্পর্কে। আশাকরি, আপনারা অনেক উপকৃত হবেন। তাই মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার অনুরোধ রইলো।
শুধু তাই নয় বন্ধুরা, গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়ার উপকারিতা, লটকনে কি কি ভিটামিন আছে, লটকনের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও সতর্কতা এবং লটকন কিভাবে খায় এসব সহ আরো ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যা দ্বারা আপনারা উপকৃত হবেন। তাই আশা রাখি ধৈর্য্য ও মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়বেন।
লটকনের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
লটকন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। যা দিনে দুই থেকে তিনটি খেলে ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে। তাছাড়াও এতে রয়েছে নানান রকমের পুষ্টি উপাদান যা শরীরকে সুস্থ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং রুচি বাড়াতেও খুবই উপকারী এই লটকন ফল। লটকন ফলে ভিটামিন সি অধিক পরিমাণে থাকায় চর্মরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
লটকন চাষ পদ্ধতি
প্রায় সব রকমের মাটিই লটকন চাষের জন্য উপযোগী। কিন্তু বেলে দোআঁশ মাটিতে ফলন একটু বেশি ভালো হয়। বৃষ্টি হলে পানি জমে থাকবে না এমন জায়গায় এই গাছ লাগাতে হবে। বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য গাছ লাগাতে হয় আবার ভাদ্র আশ্বিন মাসেও লাগানো যাবে।
একটা গাছ থেকে আরেকটি গাছের দূরত্ব কমপক্ষে (৬)মি. হতে হবে। দৈর্ঘ্যে প্রস্থে এবং গভীরে (১) মি. আঁকারে একটি জায়গায় মাটি খনন করে নিন। খনন কৃত স্থানে (১৫) কেজি গোবর, (৫০০) গ্ৰাম টিএসপি, (২৫০) গ্ৰাম এমওপি, ভালোভাবে মিশিয়ে নিন এরপর খনন কৃত স্থানটি ভরাট করে শুকানোর জন্য রেখে দিন।
এভাবে (১২-১৫) দিন পরে মিশ্রন করা উপাদান গুলো পুণরায় ভালো ভাবে কুপিয়ে মিশিয়ে চারা লাগিয়ে দিন। তারপর চারাটিতে পানি দিয়ে খুঁটি পুঁতে বেঁধে বেড়া দিয়ে ঘিরে দিন। প্রতিনিয়ত পানি দিন । গাছে ফল আসার পরও দুই একবার পানি দিন তাহলে ফল বড় হবে এবং ফলন বৃদ্ধি পাবে।
লটকন কিভাবে খায়
লটকন খুবই রসালো একটি ফল। এই ফলটি যেভাবে খাবেন, প্রথমে একটু চাট মসলা তৈরি করে নিবেন - পরিমাণ মতো লবন, সামান্য বিটলবন, একটু মরিচের গুঁড়া এই মসলা গুলো একসাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে নিন।
তারপর লটকন ফলের খোসা ছাড়িয়ে তৈরি করে রাখা চাট মসলাতে একটু একটু করে নিয়ে খেতে পারেন। অথবা অনেক গুলো লটকন ফলের খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে রেডি করে রাখা মসলার সাথে মাখিয়ে খেতে পারেন।
লটকন ফলে কি কি ভিটামিন আছে?
লটকন একপ্রকার টক মিষ্টি ফল। লটকন ফলে প্রচুর ভিটামিন বি ও বি-২ এবং অধিক মাত্রায় ভিটামিন সি আছে। (২-৩)টি লটকন ফল এক দিনের ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করতে সহায়ক। লটকন ফলে থাকা এনজাইম এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড দেহ গঠন এবং কোষকলা সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
লটকন ফলের পুষ্টিগুণ ও ভিটামিন সম্পর্কে বিস্তারিত বিশ্লেষণ নিম্নরূপ:
ভিটামিন সি (অ্যাসকরবিক অ্যাসিড): লটকন ফলে ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম লটকনে প্রায় ১৭৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ভিটামিন সি আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধি করে, ত্বক ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখে, এবং আয়রন শোষণে সাহায্য করে।
ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন): লটকনে ভিটামিন বি-১ থাকে, যা শরীরের কার্বোহাইড্রেট মেটাবলিজমে সাহায্য করে এবং নার্ভাস সিস্টেমের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। ১০০ গ্রাম লটকনে প্রায় ০.০৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১ থাকে।
ভিটামিন বি-২ (রিবোফ্লাভিন): এই ভিটামিনটি শরীরের এনার্জি উৎপাদনে জড়িত এবং চোখের স্বাস্থ্য এবং ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ১০০ গ্রাম লটকনে প্রায় ০.১৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ থাকে।
এছাড়াও, লটকন ফলে আমিষ, চর্বি, আয়রন, এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ যেমন ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি থাকে যা শরীরের জন্য উপকারী। লটকন ফল খেলে বমি বমি ভাব দূর হয়, তৃষ্ণা নিবারণ করে, মানসিক চাপ কমায়, এবং চর্মরোগ প্রতিরোধ করে। এই ফলের বীজ গনোরিয়া রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
সব মিলিয়ে, লটকন ফল একটি পুষ্টিকর এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে থাকে।
গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়ার উপকারিতা
এমন একটা সময় ছিল আমরা লটকন ফলকে চিনতামও না। তাই বাংলাদেশে এই ফলের খুব একটা জনপ্রিয়তাও ছিলো না। কিন্তু লটকনের ঔষধি গুণ, পুষ্টি এবং স্বাদে মানুষের কাছে লটকনের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখন লটকন কেবল পরিচিত ফলই নয়, অতি প্রয়োজনীয় ফল হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে প্রায় সব জায়গাতেই।
গর্ভাবস্থায় লটকন ফল খাওয়া আরও বেশি উপকারী। কেননা -
১. আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে: গর্ভবতী মহিলাদের বেশি বেশি আয়রনের পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দেন থাকেন বিশেষজ্ঞরা। একজন গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে দিনে অন্তত (২৭) মি.গ্ৰা. আয়রন গ্ৰহণ করা উচিত।
গবেষণায় দেখা যায় যে, কম ওজনের বাচ্চা প্রসবের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে আয়রন, এমনকি মাতৃ রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে আয়রন। আর লটকন ফল আয়রনের অন্যতম সেরা একটি উৎস। তাই নিয়মিত খেলে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করবে।
২. ভ্রুনের কোলাজেন ত্বক ও হাড়ের বৃদ্ধি এবং সুস্থ্য রাখতে কার্যকর: লটকনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। আর এই ভিটামিন সি মাতৃগর্ভের শিশুর কোলাজেন, ত্বক, হাড়, শিশুর সকল অংশের বৃদ্ধি এবং যেকোনো ইনফেকশন অথবা খারাপ জীবাণুকেও পরাস্ত করতে সক্ষম এই 'ভিটামিন সি'।
৩. খাদ্য শক্তির যোগান: আমরা সবাই জানি যে গর্ভাবস্থায় তুলনামূলক ভাবে বেশি খাবারের প্রয়োজন হয়ে থাকে। লটকন খাদ্য শক্তির ভালো উৎস হওয়ায় দেহকে সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে। প্রতি (১০০) গ্ৰাম লটকন ফলে (৯২) কিলো ক্যালরি খাদ্য শক্তি পাওয়া যায় । মা আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠালের চেয়ে দ্বিগুণ।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: লটকনে আছে অ্যামাইনো অ্যাসিড ও এনজাইম। যা দেহ গঠন ও কোষকলার সুস্থ্যতার জন্য অধিক প্রয়োজন। লটকন ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত আমিষ, লৌহ, চর্বি ও খনিজ পদার্থ। এসব উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৫. বমি বমি ভাব দূর করে: একজন মহিলা যখন গর্ভবতী হয় তখন সবসময় গা গোলায় বমি বমি ভাব হয়। এমতাবস্থায় লটকন ফল আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই ফলটি আপনাকে এ সমস্যাগুলোর হাত থেকে রেহাই দিতে পারে। পাশাপাশি মানসিক ক্লান্তিদায়কতা দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
৬. তৃষ্ণা মেটায়: গর্ভবতী মায়ের শরীরে অন্য আরেকটি প্রাণের অস্তিত্ব থাকে। আর তা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। তাই এসময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানির প্রয়োজন হয়। তৃষ্ণা বেড়ে যায়। আর এই তৃষ্ণা মেটাতে সাহায্য করে থাকে লটকন ফল। কেননা এতে জলীয় অংশের পরিমাণ অধিক।
৭. মুখের রুচি বাড়ায়: সাধারণত গর্ভাবস্থায় মহিলাদের কোনো কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। পেটের সন্তানের কথা ভেবে এবং নিজের একটু সুস্থ্যতার আশায় জোর করে হলেও খেতে হয়। এমতাবস্থায় লটকন ফল খেতে পারেন। কারণ লটকনের স্বাদ টক মিষ্টি হওয়ায় মুখের রুচি বাড়ায়।
সতর্কতা
লটকন ফল অধিক গুণে গুণান্বিত হওয়া সত্ত্বেও এই ফলকে একসাথে বেশি খেতে নিষেধ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা একথা জানান যে, একসাথে বেশি লটকন ফল খাওয়ায় অন্যান্য খাবার খাওয়ার ইচ্ছার অবনতি হয়ে থাকে। যা গর্ভাবস্থায় মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই দিনে (২-৩) টি লটকন ফল খাওয়ার পরিমাণই সঠিক।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় বন্ধুরা, লটকনের পুষ্টিগুণ উপকারিতা এবং সতর্কতা নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি, আমাদের এই আর্টিকেল পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। ভালো লাগলে পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন। এধরনের আরো তথ্য পেতে পেজটি প্রতিনিয়ত ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url