বিলিরুবিন কি? বিলিরুবিনের নরমাল রেঞ্জ, বেড়ে গেলে কমানোর উপায়

আসসালামু আলাইকুম! প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা সকলে ভাল আছেন? আমিও আল্লাহর রহমতে আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। টাইটেল দেখে হয়তো বুঝতে পেরেছেন আজকে আমরা কি নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। আজকে আমরা আলোচনা করব বিলিরুবিন কি? বিলিরুবিনের নরমাল রেঞ্জ, বেড়ে গেলে কমানোর উপায় সম্পর্কে।
বিলিরুবিনের-নরমাল-রেঞ্জ
আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো এই বিলিরুবিন নামটি আজকে প্রথম শুনলাম আবার অনেকেই হয়তো বিলিরুবিন সম্পর্কে জানি। যাই হোক আপনারা জানেন আর না জানেন আজকে আমি আপনাদের সামনে বিলিরুবিন সম্পর্কে ডিটেলস আলোচনা করব। আশা করি আপনারা ধৈর্য সহকারে আর্টিকেলটি পড়বেন এবং বিলিরুবিন কি? বিলিরুবিনের নরমাল রেঞ্জ, বেড়ে গেলে কমানোর উপায় সম্পর্কে ভালোভাবে জানবেন।

বিলিরুবিন কি? এবং বিলিরুবিনের নরমাল রেঞ্জ

বিলিরুবিন হল একটি পিগমেন্ট যা রক্তের লাল কণিকাগুলির ভাঙ্গন প্রক্রিয়ার ফলে তৈরি হয়। এটি মূলত হিমোগ্লোবিনের ভাঙ্গন প্রক্রিয়ার একটি পণ্য। যকৃত বিলিরুবিনকে প্রক্রিয়া করে এবং পিত্তের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়। বিলিরুবিনের মাত্রা বেশি হলে ত্বক এবং চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়, যাকে জন্ডিস বলা হয়। বিলিরুবিনের মাত্রা পরীক্ষা করে লিভারের স্বাস্থ্য এবং ফাংশন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

বিলিরুবিন মূলত দুই ধরনের হয়: প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ। 

প্রত্যক্ষ বিলিরুবিন হল যকৃতে প্রক্রিয়াজাত বিলিরুবিন যা পিত্তের মাধ্যমে সহজে বের হয়ে যায়। পরোক্ষ বিলিরুবিন হল অপ্রক্রিয়াজাত বিলিরুবিন যা পানিতে দ্রবণীয় নয় এবং যকৃতে প্রক্রিয়া করার জন্য প্রয়োজন। মোট বিলিরুবিন হল প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ বিলিরুবিনের যোগফল। স্বাভাবিক মাত্রা হল প্রতি ডেসিলিটারে ০.৫ থেকে ১.২ মিলিগ্রাম। এর থেকে বেশি হলে তা অস্বাভাবিক এবং জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

বিলিরুবিন যকৃতের প্লীহাতে তৈরি হয়। আমাদের দেহের রক্তের লোহিত কণিকাসমূহ স্বাভাবিক নিয়মেই যকৃতের প্লীহাতে ভেঙে বিলিরুবিন তৈরি হয়। পরবর্তীতে প্রক্রিয়াজাত হয়ে যকৃত থেকে বের হয়ে পিত্তরসের সাথে পিত্তনালীর মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে। এরপর বিলিরুবিন পায়খানার মাধ্যমে দেহ থেকে বের হয়ে যায়। কোনো কারণে এই প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়, তখন শরীর ও চেহারা ফ্যাকাশে দেখা দেয় এবং জন্ডিসে আক্রান্ত হিসেবে ধরা হয়³।

বিলিরুবিনের নরমাল রেঞ্জ

বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা সাধারণত প্রতি ডেসিলিটারে 0.3 থেকে 1.2 মিলিগ্রাম পর্যন্ত হয। এই মাত্রার বাইরে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে তা জন্ডিসের লক্ষণ হতে পারে। তবে বিলিরুবিনের মাত্রা বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

বিলিরুবিন কোথায় সঞ্চিত হয়

বিলিরুবিন সরাসরি কোনো নির্দিষ্ট স্থানে সঞ্চিত হয় না। এটি রক্তের লাল কণিকাগুলির ভাঙ্গন প্রক্রিয়ার ফলে তৈরি হয় এবং যকৃতে প্রক্রিয়াজাত হয়। প্রক্রিয়াজাত বিলিরুবিন পিত্তের মাধ্যমে ক্ষুদ্রান্ত্রে পৌঁছে এবং অবশেষে পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। বিলিরুবিন যকৃতে গ্লুকো-ইউরোনিক অ্যাসিডযুক্ত হয়ে জলদ্রাব্য হয় এবং পিত্তের মাধ্যমে ক্ষুদ্রান্ত্র পৌঁছায়।

বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়

রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা যদি 1.2 mg/dL (মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার) বা তার বেশি হয়, তাহলে জন্ডিসের সম্ভাবনা থাকে। সাধারণত, বিলিরুবিনের মাত্রা 1.5 mg/dL বা তার বেশি হলে জন্ডিস হতে পারে। তবে, এই মাত্রা বিভিন্ন বয়স এবং শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। নবজাতকদের ক্ষেত্রে, জন্ডিসের জন্য বিলিরুবিনের মাত্রা আরও কম হতে পারে। যদি আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ জন্ডিসের উপসর্গ অনুভব করেন, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রক্তে বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত

রক্তে বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা সাধারণত 0.2 থেকে 1.2 মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (mg/dL) পর্যন্ত হয়12। এই মাত্রা বেশি হলে জন্ডিসের মতো সমস্যা হতে পারে।

নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়

নবজাতকের মধ্যে জন্ডিস নির্ণয় করা হয় যখন শিশুর রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা 5 mg/dL এর উপরে থাকে। সাধারণত, ফিজিওলজিক জন্ডিসে শিশুর শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা সর্বোচ্চ 13 mg/dL পর্যন্ত হতে পারে। তবে এই মাত্রা বিভিন্ন কারণে ভিন্ন হতে পারে, এবং যদি সন্দেহ হয় তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। জন্ডিস সাধারণত নিরাপদ এবং অস্থায়ী হলেও, উচ্চ মাত্রায় বিলিরুবিন শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

শিশুর জন্ডিসের অন্যান্য লক্ষণ

নবজাতক শিশুর জন্ডিসের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
  • ত্বক এবং চোখের সাদা অংশের হলুদ বর্ণ ধারণ।
  • শিশুর ঘুম বেশি হওয়া বা সাধারণের চেয়ে বেশি অলস হওয়া।
  • খাওয়াতে সমস্যা হওয়া বা দুধ পান করতে অনিচ্ছুক হওয়া।
  • শরীরের ওজন বাড়ার হার কমে যাওয়া।
  • প্রস্রাবের রং গাঢ় হওয়া এবং মলের রং হালকা হওয়া।
এই লক্ষণগুলি দেখা দিলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। জন্ডিস সাধারণত নিরাপদ এবং অস্থায়ী হলেও, উচ্চ মাত্রায় বিলিরুবিন শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

নবজাতকের বিলিরুবিন কমানোর উপায়

নবজাতকের বিলিরুবিন কমানোর জন্য সাধারণত নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করা হয়:
বার বার খাওয়ানো: নবজাতককে প্রতি ২-৩ ঘন্টা অন্তর মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত, যা বিলিরুবিনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। নবজাতককে বার বার খাওয়ানো তার রক্ত প্রবাহ থেকে বিলিরুবিনকে দূর করতে এবং মল ও প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দিতে সহায়তা করে।

ফোটোথেরাপি: 
এই পদ্ধতিতে নবজাতককে একটি বিশেষ আলোর নিচে রাখা হয়, যা বিলিরুবিনকে ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে। বিলি-কম্বল বা সান-ল্যাম্প থেরাপি ব্যবহার করে ঘরোয়া ফোটোথেরাপি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।

সূর্যালোক: 
নবজাতককে সূর্যের নীচে উলঙ্গ অবস্থায় রেখে এটি করা যায়। তবে, দেখবেন যে শিশু যেন সকাল ৮টার আগে সূর্যের তির্যক রশ্মিগুলি পায়। নবজাতককে সকালের তির্যক সূর্যের আলোতে উলঙ্গ অবস্থায় রাখলে, বিলিরুবিনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

ঘরোয়া প্রতিকার: 
নবজাতকের জন্ডিস নিরাময়ের জন্য কিছু ঘরোয়া প্রতিকারও প্রচলিত আছে, যেমন: জিজিফাস জুজুবা ফলের নির্যাস, গাজর এবং পালং শাকের রস, আঁখের রস, গমঘাসের রস ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, এই প্রতিকারগুলি অনুশীলন করার আগে সর্বদা একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

এই পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করার আগে সর্বদা একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিত। নবজাতকের জন্ডিস সাধারণত ক্ষতিকারক নয় এবং প্রায়ই নিজে নিজেই নিরাময় হয়ে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি গুরুতর হতে পারে। তাই যে কোনো উদ্বেগজনক লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

বিলিরুবিন বেড়ে গেলে করণীয় এবং বিলিরুবিনের পরিমাণ কমানোর উপায়

বিলিরুবিন বেড়ে গেলে যে সমস্যাগুলি হতে পারে এবং তার সম্ভাব্য কারণগুলি নিম্নরূপ:

সম্ভাব্য সমস্যা ও কারণ:
  • শারীরিক দুর্বলতা
  • বমি বমি ভাব
  • খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া
  • অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন
  • অতিরিক্ত পরিশ্রম ও গরমে থাকা
  • শরীরের প্রতি যত্ন না নেওয়া
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না পান করা
চিকিৎসা ও পরিকল্পনা:
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া
  • তেল, চর্বি ও মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা
  • পানি ও তরল জাতীয় খাবার পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন বর্জন করা
বিলিরুবিন বেড়ে গেলে কমানোর জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করা উচিত:
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম: শরীরের বিলিরুবিন মাত্রা বেড়ে গেলে বিশ্রাম নেওয়া খুব জরুরি। শরীরের ক্যালরি খরচ কমানো এবং যকৃতের ওপর চাপ কমানোর জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া জরুরি1।
  • সঠিক খাদ্যাভ্যাস: তেল, চর্বি এবং মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা এবং সহজপাচ্য খাবার যেমন ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি খাওয়া।
  • তরল জাতীয় খাবার: পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং তরল জাতীয় খাবার যেমন সুপ বা জুস বেশি বেশি খাওয়া।
  • পানি পান করা: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত, তবে অতিরিক্ত পানি পান এড়ানো উচিত।
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন: এই অবস্থায় ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন একেবারেই বর্জন করা উচিত।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া: বিলিরুবিন বেড়ে গেলে প্রথমেই একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
এই উপায়গুলি সাধারণত বিলিরুবিনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তবে বিলিরুবিনের মাত্রা কেন বেড়ে গেছে এবং এর সঠিক চিকিৎসা কি হবে তা নির্ধারণের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যন্ত জরুরি। আপনি যদি বিলিরুবিনের মাত্রা নিয়ে চিন্তিত হন, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। 

উল্লেখিত তথ্যগুলি সাধারণ পরামর্শ হিসেবে দেওয়া হলেও, ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরামর্শের জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

শেষ কথা:বিলিরুবিন কি? বিলিরুবিন নরমাল রেঞ্জ বেড়ে গেলে কমানোর উপায়

প্রিয় বন্ধুরা আজকের আলোচনা ছিল বিলিরুবিন কি? বিলিরুবিনের নরমাল রেঞ্জ বেড়ে গেলে কমানোর উপায় সম্পর্কে। অনেকে হয়তো জানেন না এই বিলিরুবিন কি সম্পর্কে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। যদি উপকারে আসে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না সকলেই ভাল থাকবেন আজকের মত এখানেই শেষ করছি-আল্লাহ হাফেজ! 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url