হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা জেনে নিন

আসসালামু আলাইকুম! প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা সকলে ভাল আছেন? আমিও আল্লাহর রহমতে আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। টাইটেল দেখে হয়তো বুঝতে পেরেছেন আজকে আমরা কি নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। আজকে আমরা আলোচনা করব হাতিশুর গাছ নিয়ে।হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে।
হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম
আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো এই গাছের নামটি আজকে প্রথম শুনলাম আবার অনেকেই হয়তো এই গাছের গুনাগুন সম্পর্কে জানি। যাই হোক আপনারা জানেন আর না জানেন আজকে আমি আপনাদের সামনে হাতিশুর গাছের সবকিছু ডিটেলস আলোচনা করব। আশা করি আপনারা ধৈর্য সহকারে আর্টিকেলটি পড়বেন এবং হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানবেন।

    হাতিশুর গাছ কি- ভূমিকা

    হাতিশুর গাছ এক প্রকার এক বর্ষ জীবী আগাছা জাতীয় উদ্ভিদ। হাতিশুর গাছ বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। কেউ কেউ  এই গাছকে হাতিশুড়ি, হাতি শুন্ডি, হস্তীশুণ্ডী, শ্রী হস্থিনী, মহাশুন্ডি ইত্যাদি নামে ডেকে থাকে। হাতিশুর গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে-Heliotropium indica. এই উদ্ভিদটি এশিয়া মহাদেশে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এই উদ্ভিদ ১৫ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এটি দৃঢ় শাখান্বিত এক বর্ষজীবী উদ্ভিদ।

    হাতিশুর গাছের কান্ড রোমযুক্ত একান্তর বিন্যাস ও ডিম্বাকার পাতা বিশিষ্ট। পাতার রং গাঢ় সবুজ এবং পত্র পিট অমসৃণ ও খসখসে এবং কিনারা ঢেউ খেলানো, এই গাছের পাতা উটকো গন্ধ বিশিষ্ট ।কাণ্ডের শিষ্যে লম্বা ও বাঁকানো পুষ্পদ দন্ডে হাতির শূড়ের মতো লম্বা তাই এ গাছ হাতিশুর গাছ নামে পরিচিত। এই গাছের পুরো পুষ্পদ দন্ডজ জুড়ে ছোট ছোট সাদা ফুল ফোটে, ফুলের রং কখনো সাদা হয় আবার কখনো হালকা বেগুনে রঙেরও হয়ে থাকে। 

    এর আকৃতি অনেকটা মাইকের মত হয়ে থাকে। একটি পাপড়িতে পাঁচটি খাস থাকে যা দেখতে অনেকটা কলমি ফুলের মত মনে হয়।হাতিশুর গাছের সারা বছর ফুল ফোটে তবে বর্ষাকালে বেশি ফুল ফোটে।হাতিশুর গাছের গর্ভাশয় চার খণ্ড বিশিষ্ট এবং এর ফল ও বীজ খুবই ক্ষুদ্র, এই গাছে বিভিন্ন ধরনের উপাদান পাওয়া যায় যেমনঃইন্ডিসিন, পাইরোলজিডিন , হেলিও ট্রিন ইত্যাদি ।

    হাতিশুর গাছ কি কি কাজে লাগে

    প্রিয় বন্ধুরা এখন আমরা জেনে নেব হাতিশুর গাছ কি কি কাজে লাগে। তো চলুন বন্ধুরা জেনে নেওয়া যায়। হাতিশুর উদ্ভিদ বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই হাতিশুর উদ্ভিদ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহারিত হয়ে আসছে।-

    • শরীরের কোন স্থান ফুলে গেলে হাতিশুর পাতার রস করে হালকা গরম করে ফোলা স্থানে লাগালে ফোলা কমে যায়।
    • কোন স্থানে আঘাতে ব্যথা হলে ব্যথা জনিত স্থানে হাতিশুর পাতার রস গরম করে লাগালে ব্যথা কমে যায়।
    • রিউমেটিক বাতে-হাতিশুর পাতার রসের সাথে রেডির তেল মিশিয়ে ব্যবহার করলে বাত দূর হয়।
    • বিষাক্ত পোকামাকড়ে কামড়ালে আক্রান্ত স্থানে হাতিশুর পাতার রস ব্যবহার করলে আক্রান্ত স্থানের জ্বালাপোড়া দূর হয় এবং ফোলা ও ব্যথা কমে যায়।
    • টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাতিশুর পাতার রস গরম করে খাওয়ালে টাইফয়েড জ্বর এ আক্রান্ত রোগী সুস্থতা লাভ করে।
    • ফ্যারেনজাইটিস রোগে হাতিশুর পাতার রস পানির সাথে মিক্স করে হালকা গরম করে সেবন করলে এরূপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
    • দেহে ছত্রাকজনিত সংক্রমণে লাল চাকা চাকা দাগ , দাউদ ও একজিমা আক্রান্ত স্থানে হাতিশুর পাতার রস ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়।
    • সর্দি , জ্বর ও কাশিতে হাতিশুর গাছের শিকড় পানির সাথে ফুটিয়ে কাথ্ব করে  সেবন করলে এই সকল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
    • যে সকল ব্যক্তিরা শারীরিক মেলামেশায় অক্ষম হাতিশুর গাছের মূল তাদের জন্য বেশ কার্যকর।

    হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম

    প্রিয় বন্ধুরা উপরে আমরা জানলাম হাতিশুর গাছ কি কি কাজে ব্যবহার করা যায়। এখন আমরা জানবো কিভাবে আপনি হাতিশুর গাছের শিকড় খাবেন অর্থাৎ হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে তো চলুন বন্ধুরা জেনে নি-

    প্রথমে শিকড় সহ গাছটি তুলে নিতে হবে। তারপরে গাছ থেকে গাছের শিকড় আলাদা করে নিতে হবে। এরপর শিকড় টি পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। শিকড় ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়ে গেলে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে তারপরে এটি খাওয়ার উপযুক্ত হবে।হাতিশুর গাছের শিকড় চিবিয়েও খাওয়া যায় আবার সিল গোড়ায় বেটে পেস্ট করেও খাওয়া যায়। তবে আপনি যদি যৌন সমস্যায় ভুবেন তাহলে একটি পান পাতার ভেতর হাতিশুর গাছের শিকড় বা মূল দিয়ে তার ভেতর এক চামচ পরিমাণ মধু দিয়ে ভালোভাবে চিবিয়ে রসটা খেয়ে নিতে হবে 

     আরো পড়ুন: ওজন কমাতে এবং খালি পেটে লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা

    এবং খোসাটা ফেলে দিতে হবে এভাবে দিনে দুইবার খেলে সার   ত দিনেমধ্যেই ভালো রেজাল্ট পাওয়া যাবে। কিন্তু আপনি যদি এভাবে খেতে না পারেন তাহলেহাতিশুর গাছের শেকর বেটে পেস্ট করে নেবেন এবং তার সাথে পান পাতার রস ও মধু মিক্স করে সকাল সন্ধ্যা সেবন করবেন আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে আপনার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

    হাতিশুর গাছের শিকড়ের উপকারিতা

    হাতিশুর গাছের শিকড় অনেক উপকারী। এই গাছটি পুরনো দালান ঘেষে কিংবা রাস্তার ধারে আগাছার মাঝে জন্মেতে দেখা যায়। এই গাছটি আমাদের জন্য অনেক উপকারী আমাদের বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে এই গাছের শিকড় ব্যবহার করা হয় তো চলুন বন্ধুরা জেনে নিন কোন কোন রোগের ওষুধ হিসেবে এই গাছের শিকড় ব্যবহার করা হয়-

    • হাতিশুর গাছের শিকড় যৌন সমস্যার স্থায়ী সমাধানে অনেক উপকারী। কোন ব্যক্তি যদি স্ত্রীর সাথে মেলামেশা অক্ষম হয় তাহলে সেই ব্যক্তিকে এক সপ্তাহ দিনে দুইবার হাতিশুর গাছের শিকড় রস করে মধু ও পান পাতার সাথে খাওয়ালে আল্লাহর রহমতে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থতা লাভ করবে। এই গাছের নাম এমনি এমনি হাতিশুর রাখা হয়নি এই গাছের উপকারিতা হাতিশুর এর মতই। হাতিশুর গাছের শিকড়টি এইভাবে সেবন করলে ছেলেদের গপনাঙ্গ হাতিশুর এর মতই লম্বা ও শক্ত হবে।
    • জ্বর সর্দি কাশির জন্য হাতিশুর গাছের শিকড় অনেক বেশি উপকারী। এই গাছের শিকড় বা মুল পানির সাথে সেদ্ধ করে সেই পানে আক্রান্ত ব্যক্তিকে খাওয়ালে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থতা লাভ করবে।
    • দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে আক্রান্ত ব্যাক্তি হাতিশুর গাছের মূল চিবালে মারীর যে কোন সমস্যা দূর হয়ে যাবে। 
    • হাতিশুর গাছের ঔষধি গুনাগুন
    • হাতিশুর গাছের ঔষধি গুনাগুন ব্যাপক বিস্তারিত । আঘাত পাওয়ার পরে কোন স্থান ফুলে গেলে এবং ব্যথা অনুভূত হলে হাতিশুর  গাছের পাতার রস হালকা গরম করে ফোলা জায়গায় লাগালে ব্যথা ও ফোলা দুটোই কমে যায়।
    • ঠান্ডা লেগে যাওয়ার ফলে হাত ও পায়ের গিরা ফুলে গেলে বা বাগি ফুলে গেলে , উরু বা তলপেটের মাঝখানে ব্যথা করলে  , কুচকির ডানে ও বামে যে কোন স্থান ফুলে গেলে হাতিশুর গাছের পাতার রস গরম করে বা পাতা বেটে পেস্ট বানিয়ে হালকা গরম করে আক্রান্ত স্থানে লাগালে ব্যথা কমে যায় এবং ফোলা ভালো হয়ে যায়।
    • কোন কারনে যদি চোখের ভেতর লাল হয়ে যায় , বা চোখের মধ্যে ধুলোবালি পড়ে যায় , পোকা পড়ে যায় , বা কোন খরকুটা আটকে যায় তাহলে হাতিশুর গাছের পাতার রস অব্যর্থ ওষুধ।
    • দাউদ ও একজিমা থেকে মুক্তির ১০০% কার্যকারী ঔষধ হচ্ছে হাতিশুর  গাছের পাতার রস। আপনি যদি দাউদ বা একজিমা রোগে আক্রান্ত থাকেন তাহলে হাতিশুর গাছের পাতার রস লাগিয়ে দেখতে পারেন আল্লাহর রহমতে ভালো হয়ে যাবে।
    • ব্রণের সমস্যার সমাধান করতে হাতিশুর গাছের গুনাগুন আরও বেশি। আপনার ত্বকে যদি ব্রণের সমস্যা থাকে তাহলে গোসলের এক ঘন্টা আগে হাতিশুর পাতার পেস্ট করে ত্বক কে লাগিয়ে দিন। ভালো রেজাল্ট করার জন্য একটানা কয়েক দিন ব্যবহার করুন। আপনার দেখবেন আপনার ব্রণের সমস্যা সমাধান হয়েছে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন হাতিশুর গাছের ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে।
    • এছাড়াও যৌনশক্তি বৃদ্ধি করতে হাতিশুর গাছের বিকল্প নেই। আপনি যদি এরকম সমস্যা হবেন তাহলে হাতিশুর গাছের শিকড়বা মুল বা সকালে খালি পেটে এবং রাতে ঘুমানোর আগে মধু দিয়ে একটানা 21 দিন সেবন করে তাহলে ১০০% সুফল পাবেন। ওষুধ খাওয়ার ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে ভালো কিছু অনুভব করতে পারবেন।

    শেষ কথা:হাতিশুর গাছের শকড় খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে

    প্রিয় বন্ধুরা আজকের আলোচনা ছিল হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে। অনেকে হয়তো জানেন না এই গাছটির গুনাগুন সম্পর্কে। এই গাছটি আমরা আমাদের বাড়ির আশপাশে দেখতে পায় কিন্তু জানিনা এই গাছের এত উপকারিতার কথা। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। যদি উপকারে আসে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না সকলেই ভাল থাকবেন আজকের মত এখানেই শেষ করছি-আল্লাহ হাফেজ! 

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url