প্রচন্ড গরমে শরীর সুস্থ রাখতে যা করণীয়
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি গ্রহণ করা
পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া মানব জীবন অচল। শুধু মানব জীবন বললে ভুল হবে পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে যত পশুপাখি আছে সকলেই পানির উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। পানি পানের বিকল্প অন্য কোন কিছুই নেই। প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করতে হবে তা নির্ভর করে আবহাওয়ার উপর এবং পরিশ্রমের উপর। পরিশ্রম করলে বেশি ঘাম ঝরে শক্তি বের হয় এর জন্য বেশি পানি পানি প্রয়োজন হয়। শীতকাল অপেক্ষা গ্রীষ্মকালে বেশি পানি পান করতে হয় .
কারণ গ্রীষ্মকালে আবহাওয়া উষ্ণ থাকে ফলে বার বার পিপাসা পায় এবং পানি খেতে ইচ্ছে হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের দিনে তিন থেকে চার লিটার পানি খাওয়া উচিত। প্রয়োজনের তুলনায় কম পরিমাণে পানি গ্রহণ করলে নানা ধরনের অসুবিধা দেখা দিতে পারে। যে সকল ব্যক্তিরা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘামেন তাদের জন্য বেশি বেশি পানি পান করা উচিত।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে আমাদের কিডনি, হৃদপিণ্ড, যকৃৎ, ও মস্তিষ্ক ভালো থাকবে। শরীরে রক্ত চলাচল প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকবে। পানি আমাদের শরীরের ভেতরের কষ্ট গুলোকে সবল ও শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে প্রয়োজনে তুলনায় কম পরিমাণে পানি গ্রহণ করলে শরীরের ভেতরের উপোসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়।
পানি পানির সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে পানিটা যেন বিশুদ্ধ হয় কারণ অবিশুদ্ধ পানি পান করলে শরীরের মধ্যে অনেক রোগ বালাই দেখা দিতে পারে। যেমনঃ ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড ও জন্ডিস সহ বিভিন্ন ধরনের পানি বাহিত রোগদেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
পানি বিশুদ্ধ করার সঠিক উপায় হচ্ছে পানিকে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ভালোভাবে ফোটাতে হবে। তারপর ঠান্ডা করে সেই পানি পান করতে হবে। অথবা সঠিক পদ্ধতিতে ফিল্টার করে পানির জীবাণুমুক্ত করে খেতে হবে তো বন্ধুরা বুঝতে পারছেন প্রচন্ড গরমে শরীর সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা কতটা জরুরী।
স্বাস্থ্যকর ও সতেজ খাবার গ্রহণ করা
প্রচন্ড গরমে শরীর সুস্থ রাখতে অবশ্যই আমাদের স্বাস্থ্যকর ও সতেজ খাবার গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু আমরা কিভাবে বুঝব কোন খাবার গুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকার। চলুন তাহলে বন্ধুরা জেনে নিই স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে।
স্বাস্থ্যকর সবজি সমূহঃ যে সকল সবজি আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে সে সকল সবজিকে স্বাস্থ্যকর সবজি বলে। যেমন কাঁচা পেঁপে, লাউ , শসা ,চিচিঙ্গা , গাজোর , টমেটো , পটল ও ঢেঁড়স ইত্যাদি। এ সকল সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন , খনিজ পদার্থ , ফাইবার , আন্টি-অক্সিডেন্ট ও আস রয়েছে। শরীর সুস্থ সুস্থ রাখার জন্য খুবই দরকারি। আপনি যদি আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে চান এবং আপনার শরীরকে সতেজ রাখতে চান তাহলে প্রচন্ড গরমের সময় অবশ্যই এই সবজিগুলো খাবেন, কি করে বর্ণিত সবজিগুলো শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এই সবজিগুলো আপনি ভাজি করে বা ঝোল রান্না করে খেতে পারেন।
স্বাস্থ্যকর ফল সমূহঃ সব ভালোই আমাদের জন্য উপকারী এবং স্বাস্থ্যকর। কিন্তু এমন কিছু ফল আছে যা সব সময় গ্রহণ করা যায় না নির্দিষ্ট সময়ে খেতে হয়। প্রচন্ড গরমের সময় অবশ্যই আমাদের ঠান্ডা জাতীয় ফল খেতে হবে যে সকল ফল খেলে আমাদের শরীর মস্তিষ্ক ঠান্ডা থাকবে সুস্থ থাকবে এবং সাথেই থাক... সে সকল ফলকে আমি স্বাস্থ্যকর ফল বলেছি চলুন তাহলে জেনে নেই স্বাস্থ্যকর ফলগুলো সম্পর্কে। কাঁচা আম, তরমুজ, বাঙ্গি, শসা, কমলা লেবু, বাতাবি লেবু ইত্যাদি ফলসমূহ শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ রাতে ঘুম না হলে কি খাওয়া উচিৎ
স্বাস্থ্যকর পানীয়ঃ আমরা বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি পান করি যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর কিন্তু এমন অনেক প্রাণী আছে যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী সে সকল পানীয় গ্রহণ করা আমাদের উচিত। আখের রস , লেবুর রস , তোকমা দানা মিশ্রিত রস , বেলের শরবত , জিরা পানে ও পুদিনা পাতার রস ইত্যাদি আমাদের জন্য স্বাস্থ্য পানীয়।
রাস্তার পাশের ফাস্ট ফুড পরিহার করা
প্রচন্ড গরমের শরীর সুস্থ রাখতে আমাদের অবশ্যই রাস্তার পাশের ফাস্ট ফুড পরিহার করতে হবে। রাস্তার পাশে যে খাবারগুলো তৈরি হয় সেগুলো খোলামেলা ভাবে থাকে যার ফলে বিভিন্ন ধরনের ধুলোবালি এবং দূষিত পদার্থ মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শরীর সুস্থ রাখতে চাইলে বাইরের ভাজাপোড়া এই ফাস্টফুড পরিহার করতে হবে।
কারণ এই খাবারগুলো আমাদের শরীরের ক্ষতি করে । শুধু খাওয়ার সময় ভালো লাগে তা ছাড়া এই খাবার গুলোর আর কোনভাল উপকারিতা নেই। তাই প্রচন্ড গরমের সময় শরীর সুস্থ রাখতে যতটা সম্ভব বাইরের খাবার গুলো পরিহার করতে হবে।
নিয়মিত গোসল করা
গ্রীষ্মকালে অর্থাৎ প্রচন্ড গরমের দিনে আমাদের শরীর থেকে অনেক ঘাম ঝরে। এবং অল্পতেই আমাদের মাথা গরম হয়ে যায় তাই বাইরে থেকে ভ্রমণ শেষ করে বাসায় যত দ্রুত সম্ভব গোসল করতে হবে। প্রচন্ড গরমে শরীর সুস্থ রাখতে আমাদের নিয়মিত গোসল করতে হ... কারণ গরমের সময় আমরা অনেক বেশি ঘেমে যায় যার ফলে আমাদের শরীরে ময়লা জমে এবং গোসল না করলে এই ময়লা গুলো এক সময় ফাঙ্গাস এ পরিণত হয় ।
আরো পড়ুনঃ ভিয়েতনাম নারিকেল গাছের বৈশিষ্ট্য, রোপন পদ্ধতি, পরিচর্যা এবং সার প্রয়োগ
এবং এই ফাঙ্গাস থেকে ইনফেকশন সৃষ্টি হয়। এছাড়াও অনেক অনেক বেশি ঘামার ফলে ঘাম শরীরে বসে গিয়ে জ্বর ,সর্দি কাশি ইত্যাদি হতে পারে। তাই অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আগে আমাদের সুস্থ থাকার কথা চিন্তা করা উচিত। অসুস্থ হলে তো আমরা তখন ঠিক করে ডাক্তারের সব কথা মেনে চলি। প্রচন্ড গরমের শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত গোসল করা আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হওয়া
সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি আমাদের ত্বকের ও চোখের জন্য অনেক ক্ষতিকর। সূর্য থেকে যে ক্ষতিকর আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি পৃথিবীতে আসে তা আমাদের চোখের নিচে কালো দাগ সৃষ্টি করে। তাই প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়া উচতএবং বাইরে বের হলে অবশ্যই ছাতা এবং চোখে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি প্রতিরক্ষা মূলক চশমা ব্যবহার করা উচিত প্রচন্ড গরমে শরীর সুস্থ রাখতে চাইলে অবশ্যই আমাদের সূর্যের তাপ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে হবে।
ক্যাফে ইন ও মদ্যপান এড়িয়ে চলা
কফি, মদ ও ঠান্ডা পানি শরীরকে ডিহাইট্রেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানি শূন্য করে দেয় তাই যতদূর সম্ভব গরম কালে শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য মদ ও ক্যাফেইন থেকে দূরে থাকা উচিত। এর পরিবর্তে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত কারণ প্রচন্ড গরমে শরীর সুস্থ রাখতে আমাদের অবশ্যই দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে।
প্রচন্ড গরমে শরীর সুস্থ রাখতে যা করণীয় সম্পর্কে শেষ কথা
শীতকাল থেকে গ্রীষ্মকাল শুরু হতেই আমাদের শারীরিক অবস্থার অনেক অবনতি হয়। কারণ হঠাৎ করে আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়, যার ফলে আমাদের শারীরিক পরিবর্তন হয় বিভিন্ন ধরনের অসুবিধে দেখা দেয়। তাই প্রচন্ড গরমে শরীর সুস্থ রাখতে সুষম খাবারের দিকে নজোর দাড়ি রাখতে হবে। শর্কর, প্রোটিন, স্নেহ, মিনারেল, ভিটামিন ও পানি খাবারে থাকতেই হবে।
কেননা খাদ্যের উপর নির্ভর করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আর শরীর সুস্থ রাখতে অবশ্যই আমাদের সতেজ ও টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। তো ভিউয়ার্স বুঝতে পারছেন প্রচণ্ড গরমে শরীর সুস্থ রাখতে আমাদের কি কি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন সকলেই ভাল থাকবেন-আল্লাহ হাফেজ!
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url