জলাতঙ্ক কি? জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ

এনসেফ্যালাইটিস জলাতঙ্কের উপসর্গ এবং লক্ষণ গুলির মধ্যে এটি প্রকাশ পেতে পারে এবং এর পরে মৃত্যু হতে পারে।আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব জলাতঙ্ক কি? জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ নিয়ে তাই এই পোস্ট টি আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে জানতে পারবেন জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে ।
জলাতঙ্ক-রোগের-লক্ষণ-ও-প্রতিরোধ
এই পোস্ট টি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনারা জানতে পারবেন জলাতঙ্ক কি? জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সমূহ । জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ জানতে এই পোস্ট টি আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে ।

জলাতঙ্ক কি

জলাতঙ্ক হল এক ধরনের ভাইরাস জনিত জুনোটিক রোগ, অর্থাৎ যে রোগ প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। রেবিজ ভাইরাস নামক নিউরোট্রপিক ভাইরাস দ্বারা এই রোগ সৃষ্টি হয়। এই রোগ সাধারণত গৃহপালিত প্রাণী ও বন্য প্রাণীদের প্রথমে সংক্রমিত করে।রেবিজ ভাইরাস হল একধরনের নিউরোট্রপিক ভাইরাস, যা মানুষ ও প্রাণীর দেহে রেবিজ রোগ সৃষ্টি করতে পারে। 

এই ভাইরাস সাধারণত প্রাণী ও মানুষের লালারসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে এবং বহু পোষক প্রাণীতেও রয়েছে। এটি জলাতংক রোগের জন্য দায়ী।

জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ

এনসেফ্যালাইটিস জলাতঙ্কের উপসর্গ এবং লক্ষণ গুলির মধ্যে এটি প্রকাশ পেতে পারে এবং এর পরে মৃত্যু হতে পারে।উপসর্গ হলো মাথা ব্যথা,গলা ব্যথা,জ্বর এবং কামরের জায়গায় খিচুনি।অত্যাধিক লালা নিঃসরণ,গিলতে অসুবিধা,উদ্যোগ, বিভ্রান্তি, অনিদ্রা,আংশিক পক্ষাঘাত,কোমা এবং বাতাসের ভয় সম্পর্কিত লক্ষণ গুলি থাকতে পারে।

বাতাসের ঠান্ডা স্রোতে অশহিষ্ণুতা এবং এরোফোবিয়া বা বাতাসের ভয় দেখা যায়।মানুষ সাধারণত কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়।যে কুকুর র‍্যাবিস ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত সেই কুকুর কাউকে কামড়ালেই জলাতঙ্ক রোগ হয়।আমাদের দেশে বেশিরভাগ জলাতঙ্ক রোগই হয় কুকুর কামড়ালে।এই রোগ মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ডকে প্রভাবিত করে।

জলাতঙ্ক বা হাইড্রোফোবিয়া একটি খুব ভয়ানক ভাইরাস সংক্রমণ যা সাধারণত মাংসাশী প্রাণীদের দ্বারা সংক্রমিত হয়। এটি বেশিরভাগ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কিছু অংশে দেখা যায়, কিন্তু অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আইসল্যান্ড, তাইওয়ান, জাপান এবং সাইপ্রাসের মতো কিছু দ্বীপগুলিতে এর অস্তিত্ব নেই। এটি জুনোটিক রোগের অধীনে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে, অর্থাৎ এটি প্রাণীদের সাথে সম্পর্কিত।

জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধের উপায়

রোগ প্রতিরোধের উপায় হলো টিকা নেওয়া।এই ভাইরাসের অনেক রকম টিকা আবিষ্কার হয়েছে।যেমন human deplet sale ভ্যাকসিন, পিউরিফাইড চিক ইমব্রিও সেল ভ্যাকসিন,ডাক ইমব্রিও সেল ভ্যাকসিন,নার্ভ টিস্যু ভ্যাকসিন ইত্যাদি। ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আগে টিকা নেওয়া কে প্রে এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিস ও আক্রান্ত হওয়ার পরে 

টিকা নেওয়া কে পোস্ট এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিস বলে ধরা হয়। এই রোগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগী মারা যায়। কোন অ্যান্টিভাইরাস ঔষধ এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে না।তবে উপসম মূলক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়।র‍্যাবিশ প্রাণী কামড় দেওয়ার সাথে সাথে টিকা নিলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। রাবিস ভাইরাস একটি মারাত্মক রোগ যা 

প্রাণী থেকে প্রাণীর দেহে স্থানান্তরিত হতে পারে এবং মানুষের জন্য এটি মারাত্মক হতে পারে। উন্নত চিকিৎসার ফলে এর প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে জ্ঞান বেড়েছে, যা এই রোগের প্রভাবকে কমিয়ে আনে। তবে, এখনো প্রাণীগুলো এই রোগের ঝুঁকিতে আছে, যা মানুষের জন্য একটি ঝুঁকিতে পরিণত হতে পারে।

জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ কতদিনের মধ্যে প্রকাশ পায়

উপসর্গ র‍্যাবিস ভাইরাস এর উপর ভিত্তি করে দুই থেকে ১৬ সপ্তাহ বা আরো বেশি হতে পারে।উপসর্গ র‍্যাবিস ভাইরাসের সুপ্ত অবস্থা পায়ের তুলনায় মাথার দিকে কামড়ালে সুপ্তিকাল আরো কমে যায়। কারণ ভাইরাসের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে পৌঁছাতে সময় লাগে কম।সন্দেহজনক প্রাণী কামড়ানোর নয় থেকে 90 দিনের মাঝে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দেয়।

সাধারণত আক্রান্ত প্রাণী সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ানোর দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে। তবে এ সময় সীমা এক সপ্তাহ থেকে এক বছরও হতে পারে।বিড়ালে কামড়ালে দুই থেকে ছয় সপ্তাহ এর মধ্যে লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়।

জলাতঙ্ক রোগ কি ছোঁয়াচে

র‍্যাবিশ ভাইরাস একটি নিউরোট্রপিক ভাইরাস যা একটি জনপ্রিয় প্রাণীর সংস্পর্শের মাধ্যমে সাধারণত মানুষের ছড়ায়। এই ভাইরাস মূলত বন্যপ্রাণী থেকে শুরু করে স্ত্রী পুরুষ প্রাণীতে ছড়ায়।যারা সম্পূর্ণ টিকাদান বা যত্নের অভাবে আক্রান্ত হতে পারে। এই ভাইরাসের লক্ষণগুলির ধারাবাহিকভাবে বাড়তে পারে এবং মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

মানুষ সংক্রমিত প্রাণী গুলোর বা এদের লালার সংস্পর্শে আসলে বা এ প্রাণীগুলি যদি মানুষকে কামড়ায় অথবা আচোড় দেয় তাহলে এই রোগ মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে। একজন সংক্রামিত ব্যক্তির কামড় এবং অকামরের এক্সপোজার তাত্ত্বিকভাবে জলাতঙ্ক সংক্রমণ করতে পারে,তবে এই ধরনের ঘটনা এখনো নথিভূক্ত করা হয়নি।জলাতঙ্ক ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে সংক্রামক নয়।

ভাইরাসটি সংক্রামিত প্রাণীর কামড়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। রেবিস ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমণের সবচেয়ে সাধারণ উপায় একটি উন্মত্ত প্রাণীর সংস্পর্শে আসার পরে মানুষের জলাতঙ্ক হওয়া অন্যান্য উপায়ের তুলনায় বেশি সম্ভব। স্বাস্থ্যসেবা সেটিংস সহ মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের অন্য কোনও নিশ্চিত দৃষ্টান্ত নেই এবং এটি একটি মার্কারভ্যাইরাস রোগের সুপ্ত প্রকাশের জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই।

জলাতঙ্ক রোগের টিকার মেয়াদ

বুস্টার ডোজের পর তার মেয়াদ থাকে এক বছর।তাই প্রতি এক বছর পর পর টিকা দিতে হবে। জলাতঙ্ক রোগ হলে প্রথম ডোজ দেওয়া হবে প্রথম দিনে,পরবর্তী ডোজ দেওয়া হবে তিন দিনে,পরেরটা সাত দিনে,এরপরে ১৪ দিনে,এবং শেষ ডোজ দেওয়া হবে ২৮ দিনে। গৃহপালিত কুকুর,বিড়াল,গরু ইত্যাদির ক্ষেত্রে দশ দিন পর পর টিকা দিতে হয়।

এই অবস্থায় যদি কোন ব্যক্তি বা শিশু আগে কিংবা গত পাঁচ বছরে টিকা না নিয়ে থাকেন তাহলে তার জন্য নিম্নলিখিত সূচি অনুযায়ী টিকা দেওয়া হবে
  • ইমিউনোগ্লাবিন পাওয়া না গেলে প্রথম দিনে দুই বাহুতে দুই টিকা নিতে হবে এবং ৩,৭,১৪,২৮ তম দিনে ডোজ দিতে হবে।
  • পাঁচ বছরের মধ্যে টিকা নেওয়া থাকলে বুস্টার টিকা নিতে হবে শুরুতেই,যা হবে প্রথম দিন ও তৃতীয় দিন।

জলাতঙ্ক রোগের টিকার নাম কি

হিউম্যান ডিপ্লয়েড সেল ভ্যাকসিন (HDVC) এবং অন্যান্য টিকা সমূহ সমস্তকে র‍্যাবিস ভাইরাস থেকে প্রতিরোধ করতে ব্যবহার করা হয়।এই টিকা গুলি মূলত র‍্যাবিশ ভাইরাস থেকে র‍্যঅবিশ এর মৃত্যু প্রাপ্ত প্রাণীদের থেকে তৈরি করা হয়েছে এবং এগুলির র‍্যাবিশ ভাইরাসের বিত্রান রোধ করতে সাহায্য করে।

তবে সর্বনিম্ন প্রতিরোধ শহীদ ও নিরাপদ টিকা HDCV বিশেষভাবে বিকল্পগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য।অন্যান্য টিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পিউরিফাইড চিক ইমব্রিও সেল ভ্যাকসিন,ডাক ইমব্রিও সেল ভ্যাকসিন,নার্ভ টিস্যু ভ্যাকসিন ইত্যাদি।

জলাতঙ্ক রোগের টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

জলাতঙ্ক রোগের টিকার পরিমাণ গুলির মধ্যে সাধারণত ইনজেকশনের স্থানে ব্যাথা,লাল ভাব, ফোলা ভাব বা চুলকানি হতে পারে।আরো কিছু মানুষের জলাতঙ্কের টিকা দেওয়ার পরে মাথা ব্যথা,বমি বমি ভাব,পেটে ব্যথা,পেশিতে ব্যথা বা মাথা ঘোরা হতে পারে। এই ধরনের লক্ষণ গুলি সাধারণত সামান্য এবং অস্থায়ী।

তবে কিছু মানুষের মধ্যে আমবাত,জয়েন্টে ব্যথা বা জ্বর হতে পারে এবং এই লক্ষণগুলি বুস্টার ডোজ পরে হওয়ার সময়ে অধিক সহনশীল হতে পারে।যদিও এই লক্ষণ গুলি বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে দেখা যায় না অথবা খুব সামান্য হয়।যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিক বা সহনশীল লক্ষণের জন্য কোন চিকিৎসা পেয়ে না থাকলে,তা তা আপনার চিকিৎসকের সাথে অবশ্যই আছেন আলাপ করুন।

এই ধরনের জলাতঙ্ক PEP পদ্ধতিতে গুরুতর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার খুব কম ফ্রিকোয়েন্সি রয়েছে, যা স্থানীয় ব্যথা, মাথাব্যথা এবং নিম্ন-গ্রেডের জ্বরের জন্য এইচআরআইজি-এর প্রশাসনে অনুসরণ করা যায়। 11-90% টিকার মধ্যে ব্যথা, erythema, ফোলা, চুলকানি এবং অন্যান্য হালকা স্থানীয় প্রতিক্রিয়া রিপোর্ট করা হয়।

শেষ কথাঃ জলাতঙ্ক কি? জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ

প্রিয় বন্ধুরা, জলাতঙ্ক কি? জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি, আমার এই  আর্টিকেল পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। ভালো লাগলে পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। এধরনের আরো তথ্য পেতে পেজটি প্রতিনিয়ত ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url