বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প প্রবন্ধ সম্পর্কে জেনে নিন

প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমি তোমাদের জন্য বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প প্রবন্ধ নিয়ে এসেছি। আশা করি এই প্রবন্ধটি তোমাদের অনেক উপকারে আসবে এবং তোমাদের ভালো লাগবে। তো চলো দেরি না করে মূল আলোচনা যায়।
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প প্রবন্ধ
আজকের এই আর্টিকেলটিতে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প প্রবন্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। যদি তোমাদের বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প প্রবন্ধ সম্পর্কে জানতে ইচ্ছে করে তাহলে অবশ্যই এই আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়বে এই আর্টিকেলে আমি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি এখান থেকে তোমরা কিছু কমিয়ে লিখতে পারবে। আশা করি আর্টিকেলটি তোমাদের ভালো লাগবে।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প-ভূমিকা

বাংলাদেশে অনেক আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট রয়েছে। যুগ যুগ ধরেই বাংলাদেশের মানুষ মুগ্ধ হয়েছে বাংলাদেশের এইসব সৌন্দর্য অবলোকন করে। মানুষ ভ্রমণ করতে পছন্দ করে আর মানুষের এই ভ্রমনকে কাজে লাগে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন ভ্রমন বান্ধব স্থান বা পর্যটন কেন্দ্র আর এগুলোই পর্যটন শিল্প হিসেবে পরিচিত। পর্যটন শিল্পের কাজ হল কোন অঞ্চলের দর্শনীয় স্থানগুলোর তথ্য ভ্রমণ পিপাসু মানুষের কাছে তুলে ধরা, ভ্রমণের বন্দোবস্ত করা এবং অর্থ উপার্জন করা। 

এদের মধ্যে রয়েছে প্রচন্ড তাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ মিনার পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত, পাহাড় অরণ্য, বিস্তীর্ণ হাওর, চা বাগান ইত্যাদি এই দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে তোলে তাইতো প্রতিবছর দেশ বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ পর্যটক বাংলাদেশের এই দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণে আসে। 

বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি এলাকায় বিভিন্ন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ যেমন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের কক্সেস বাজারে অবস্থিত এছাড়াও রয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী এবং আরো আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। 

এছাড়াও আরো অনেক আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে যেমন একাধিক বনাঞ্চল,পাহাড় নদী ঝর্ণা  ,শস্য শ্যামল সবুজ বনানী, প্রকৃতির আকর্ষণ, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত  ও নান্দনিক স্থাপনা ও ভাস্কর্য।তাইতো বলা যায় বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এরো টানে দেশ বিদেশ থেকে দর্শকেরা এ সকল পর্যটন এলাকায় ভ্রমনে আসে এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প প্রবন্ধ সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সমস্যা সমূহ

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে কিছু সমস্যা রয়েছে সে সমস্যাগুলো কি কি সেগুলো সম্পর্কে আমরা একটু জেনে নেই-বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো গত অসুবিধা কারণে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে সমস্যা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিরাপত্তার অভাব যার জন্য পর্যটকেরা উদ্বিগ্ন থাকেন পর্যটন কেন্দ্রে যেতে। পর্যটন শিল্পের প্রচার ও প্রসারের জন্য সরকারি 

এবং বেসরকারি উভয়ের গাফলতি রয়েছে যার জন্য পর্যটকেরা আস্থা হারিয়ে ফেলছে। কেননা পর্যটন কেন্দ্রে বিভিন্ন ধরনের ছিনতাইসহ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে পর্যটকেরা। বিশেষ করে নারী ও বিদেশি পর্যটকেরা বেশি সমস্যায় পড়েন। এছাড়াও সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্য এবং ওয়ালাদের উৎপাত, ভিক্ষুকদের উৎপাত, যা পর্যটকদের নিরুৎসাহিত্ করছে। যার ফলে মানুষ ভ্রমণ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা রয়েছে প্রচুর পরিমাণের। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতটাই আকর্ষণীয় যে যুগ যুগ ধরে ভ্রমণকারীরা মুগ্ধ হয়ে আসছেন এই সৌন্দর্য দেখে। বাংলাদেশের এই সৌন্দর্যের লীলাভূমির জন্য পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের নতুন কৌশল উদ্ভাবন করে সম্ভাবনার সবটুকু কে কাজে লাগিয়ে পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করলে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ পর্যটন মডেল এ সবার উপরে অবস্থান করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ স্বল্প আয়তনের দেশ হলেও বাংলাদেশের যতটুকু পর্যটন সৌন্দর্য বিদ্যমান রয়েছে তাতে পর্যটকদের সহজে আকৃষ্ট করতে পারে। পৃথিবীতে পর্যটন শিল্প বৃহত্তম শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে এই পর্যটন শিল্পের বিকাশের উপর বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নির্ভর করছে। দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে যার ফলে বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করা সম্ভব হবে কেননা পর্যটন কেন্দ্রের মাধ্যমে শত শত লোকের কাজের সুযোগ হবে। 

ভিন্ন ভিন্ন দেশের প্রাচীর, শিল্পকলা, সাহিত্য ও কালচার, ইতিহাস ইত্যাদি দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকেরা নির্দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশে প্রতিনিয়ত ছুটে আসে ঐতিহাসিক স্থানগুলো দেখার জন্য তাই তো পর্যটন শিল্পকে একটি বহুমাত্র শিল্প বলা হয় এই শিল্পের বহুমাত্রিকতার কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সম্ভাবনা তৈরি করা সম্ভব হয় যার ফলে ব্যাপক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। 

সরকারি অনুদান ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট আছেন তাদের এই পর্যটন শিল্পের অবকাঠামের উন্নয়নের জন্য সজাগ হওয়া উচিত। সঠিক পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীল অবস্থা পর্যটনের জন্য দরকার। পর্যটন কেন্দ্রগুলো আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থানসমূহ

এখন আমরা আলোচনা করব বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থানসমূহ নিয়ে। তো চলুন বন্ধুরা জেনে নিয়ে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থানগুলোর নাম-

খুলনা বিভাগের সুন্দরবন

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন যা আমাদের কাছে সুন্দরবন নামে পরিচিত। সুন্দর বন গঙ্গা ও রুপসা নদীর মোহনায় অবস্থিত সমুদ্র উপকূল বাংলাদেশের ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় বিস্তৃত। 

প্রায় ২০০ বছর পূর্বে সুন্দরবনের প্রকৃত আয়তন ছিল ১৬৭০০ বর্গ কিলোমিটার কিন্তু এখন কালের বিবর্তনে সুন্দরবনের আয়তন কমে দশ হাজার বর্গকিলোমিটার এ পৌঁছেছে। এর মধ্যে ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা বাংলাদেশের মধ্যে পড়েছে। ইউনেস্কো সুন্দরবনকে হাজার 997 সালে বিশ্ব ঐতিহ্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে তাই সুন্দরবন এখন বিশ্ব মানবতার সম্পদ। সুন্দরবনের প্রধান বৃক্ষ হল সুন্দরী গাছ আর এই সুন্দরী গাছের নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়েছে সুন্দরবন। 

আরো পড়ুন: শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির 10 টি ব্যবহার - পাঠদানে প্রযুক্তির কুফল

সুন্দরী বৃক্ষ ছাড়াও সুন্দরবনে রয়েছে কেওয়া, গেওয়া, গড়ান, পশুর সহ প্রায় ২৪৫টি শ্রেণী ও ৩৩৪ প্রজাতির গাছ রয়েছে। পৃথিবীতে তিনটি ম্যানগ্রোভন রয়েছে তার মধ্যে সুন্দরবন সর্ববৃহৎ। সুন্দরবনের বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার এছাড়াও চিত্রা হরিণ, খালের পাড়ে শুয়ে থাকা কুমির এবং বানরের দল পর্যটকদের আকর্ষণ করার অন্যতম কারণ।

বাগেরহাট জেলার ষাট গম্বুজ মসজিদ

বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদের নাম হচ্ছে ষাট গম্বুজ মসজিদ। উলুক খান জাহান আলী পনেরশো শতাব্দীতে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। এই মসজিদটিতে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে।ষাট গম্বুজ মসজিদ বাগেরহাট শহরের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসাবে সম্মান প্রদান করে। ষাট গম্বুজ মসজিদের নাম ষাট গম্বুজ হলেও এতে গম্বুজের সংখ্যা।

বরিশাল বিভাগের কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

পটুয়াখালী জেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকার একটি সমুদ্র সৈকত ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত হিসেবে পরিচত। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতটি বরিশাল বিভাগের শেষ সীমানা পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার চাপালি ইউনিয়নের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত। এই সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থ হচ্ছে তিন কিলোমিটার। 

ঢাকা থেকে সড়ক পথে এই সমুদ্র সৈকতের দূরত্ব ৩৮০ কিলোমিটার এবং বরিশাল বিভাগ থেকে ১০৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের কাছে সাগর কন্যা হিসেবে পরিচিত। দর্শকরা এখানে ভিড় জমায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য। এটিই হচ্ছে এশিয়া মহাদেশের একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। একবার দেখলে বারবার দেখতে মন চাই।

ঢাকা বিভাগের লালবাগ কেল্লা

লালবাগ কেল্লা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র গুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। সম্রাট আড়ঙ্গ জেবের শাসনামলে এই লালবাগ কেল্লা নির্মাণ করা হয়। 

সম্রাট আরঙ্গজেবের পুত্র যুবরাজ শাহজাদা আজম ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে এই প্রাসাদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন তৎকালীন সময়ে এই দুর্গের নামকরণ করা হয়। এই আড়ঙ্গ বাদ দুর্গের নামকরণ করা হয় লালবাগ কেল্লা। আর এই নাম বর্তমানে প্রচলিত। এই কেল্লার চত্বরে তিনটি স্থাপনা রয়েছে সেগুলো হচ্ছে-

  • দরবার হল বা হাম্মাম খানা রয়েছে কেন্দ্রস্থলে
  • পরিবিরর সমাধি 
  • উত্তর হচ্ছে মানুষের শাহী মসজিদ

জাতীয় সংসদ ভবন

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় সংসদ ভবন বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রধান ভবন। জাতীয় সংসদ ভবনের স্থপতি লুই আই কান। জাতীয় সংসদ ভবনের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৬১ সালে । এবং এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৮২ সালে জানুয়ারি মাসে। ১৯৮২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবন উদ্ভাবন করেন।

সোমপুর বিহার

সোমপুর বিহার ধ্বংসাবশেষ একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার যা পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার নামে পরিচিত। সোমপুর মহাবিহার প্রতিষ্ঠা করেছেন পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপাল দেব। স্যার কানিংহাম এই বিহার টি আবিষ্কার করেন ১৮৭৯ সালে। 

আরো পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ, কারণ ও রক্তচাপ কমানোর ঘরোয়া উপায়

ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয় হাজার ১৯৮৫সালে। এটি বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত ধর্মচর্চা কেন্দ্র প্রায় ৩০০ বছর ধরে মানুষ এখানে ধর্মচর্চা করে শুধু উপমহাদেশ নয় পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিবছর বৌদ্ধরা এখানে ধর্মচর্চা ও জ্ঞান চর্চা করতে আসেন। বর্তমান মহাস্থানগড় অর্থাৎ প্রুণ্ডবর্ধনের রাজধানীগর পুন্ড্রনগর 

এবং কোটি বর্ষ এর মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত ছিল এটি রাজশাহীর অন্তর্গত নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত জয়পুরহাট জেলার জামালগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে অবস্থিত। সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০.৩০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত পাহাড় সদৃশ্য এই স্থানটি জেগে রয়েছে স্থানীয় লোকজন একে গোপাল জেতার পাহাড় বলেন সেই থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে পাহাড়পুর যদিও এই পাহাড়ের প্রকৃত নাম হচ্ছে সোমপুর বিহার।

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর

বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর হচ্ছে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর এটি রাজশাহী শহরে অবস্থিত। এই সংগ্রহশালাটি ১৯১৩ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্থাপন করেছিলেন। বর্তমানে এই জাদুঘরটির পরিচালনা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। বরেন্দ্র জাদুঘর রাজশাহী মহানগর এর কেন্দ্রের স্থল হেতেম খা তে অবস্থিত। 

১৯১০ সালে বাংলার ঐতিহ্য ও নিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি গঠন করা হয়। ওই সময় তারা অনুসন্ধান চালিয়ে প্রায় ৩২ টি দোষ প্রাপ্য নিদর্শন সংগ্রহ করেন ১৯১৩ সালে ১৪ই ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই বরেন্দ্র জাদুঘর কে নিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ব্যাপারে সমাজ প্রদান করে সংগ্রহের সংখ্যা প্রায় নয় হাজারের অধিক। বর্তমানে পাঁচ হাজার পুঁথি রয়েছে এর মধ্যে ৩৬৪৬ টি সংস্কৃত আর বাকিগুলো বাংলায় রচিত ।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বর্তমান অবস্থা অনেক সম্ভাবনাময় বিভিন্ন পরিসংখ্যান এর মাধ্যমে জানা গেছে যে বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের সম্মিলিত বার্ষিক ভ্রমণ ব্যয় হচ্ছে প্রায় পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বে এমন অনেক দেশ রয়েছে যাদের প্রধান আয়ের উৎস হলো পর্যটন শিল্প অর্থাৎ তারা পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে যে অর্থ উপার্জন করেন তা দিয়েই তাদের দেশ পরিচালিত হয়। 

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প দিন দিন বিকাশ লাভ করছে। যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশীয় পর্যটকদের ভ্রমণ সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে। পরিসংখ্যান বলেছেন প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন পর্যটক স্থান ভ্রমণ করে অসংখ্য জনগণ যার মাধ্যমে দেশের অর্থ খাতে ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা জমা হয়।

আরো পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ, কারণ ও রক্তচাপ কমানোর ঘরোয়া উপায়

বাংলাদেশের মানুষ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর তারপরেও বিপুল সংখ্যক পর্যটন স্থানে ভ্রমণ করে পর্যটন বিকাশের সাথে সাথে দেশের অর্থনীতি তো প্রভাব বিস্তার করছে যেমন পরিবহন আবাসিক হোটেল রেস্তরা পোশাক অলংকার প্রভৃতি ব্যবসায়ী পর্যটন শিল্পের সাথে মানুষ প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িত। পর্যটন বিকাশের মাধ্যমে মানুষের যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ হচ্ছে ঠিক তেমনি দেশের অর্থনীতি ও সচল হচ্ছে। 

হিসেব করে দেখা গেছে বাংলাদেশের প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আর বাংলাদেশের প্রায় ১০% জিডিপি পর্যটন শিল্প থেকে আয় করছে। তো বন্ধুরা আশা করি বুঝতে পেরেছেন বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বর্তমান অবস্থা কতটা সম্ভাবনাময়।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে এখন আমরা জানবো। একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতির সমৃদ্ধি লাভ করে পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভর করে। কারণ পর্যটন এলাকায় অনেক কর্মসংস্থান গড়ে ওঠে যার ফলে বেকারত্ব হ্রাস এবং মানুষের অর্থনৈতিক মন্দা ত্বরান্বিত হচ্ছে।

পর্যটকদের আগ্রহ বৃদ্ধি করার জন্য স্থান ও স্থাপনার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে এবং ঐতিহাসিক ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতির রক্ষায় সুযোগ্য মনোভাব ব্যক্ত করতে হবে যেন পর্যটনের সূত্রে বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষের মেলবন্ধন তৈরি করতে সাহায্য করে। 

২০১৮-১৯ সালে অবদান ছিল ৩.০২ শতাংশ বাংলাদেশের মুদ্রায় এর পরিমাণ হচ্ছে ৭৬ হাজার ৬৯০ টাকা। পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে দেশে প্রায় ৮.০৭ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষ বিদেশে ভ্রমণ করতে গিয়েছে 2019 সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বিদেশের পর্যটক বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণ করেছেন। দেশের মধ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন প্রায় ২০ লাখেরও বেশি পর্যটক। 

আরো পড়ুন: বিলিরুবিন কি? বিলিরুবিনের নরমাল রেঞ্জ, বেড়ে গেলে কমানোর উপায়

প্রায় ১৫ লাখ জনগণ দেশের পর্যটন খাতের সাথে সরাসরি কর্মরত রয়েছে এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ২৩ লাখ জনগণ কর্মরত রয়েছেন। দেশের পর্যটন শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪০ লক্ষ বিভিন্ন কর্মসংস্থানে কর্মরত আছেন যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। যা দেশের অর্থনীতিকে সচল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তো বন্ধুরা আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের অর্থনৈতিক প্রভাব কতটা ব্যাপক সেই সম্পর্কে।

পর্যটন শিল্পের বিকাশে করণীয়

যেহেতু বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সেজন্য পৃথিবীব্যাপী পর্যটন শিল্পের উন্নতির জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। যেহেতু পৃথিবীব্যাপী পর্যটন শিল্প দ্রুত বিকাশ লাভ করছে সেহেতু বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের দিকে বেসরকারি ও সরকারি ভাবে গুরুত্ব আরোপ করা উচিত কেননা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করছে। প্রথমে গুরুত্ব দেওয়া যাতায়াত ব্যবস্থার উপর। উন্নত পথ ও যানবাহনের ব্যবস্থা করা যাতে পর্যটকেরা আগ্রহী হয় পর্যটনকেন্দ্র পরিদর্শনের জন্য। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল সমূহে অনেকগুলো পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে।

কিন্তু সে সকল স্থানের যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ নয় যার জন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটক যেতে আগ্রহী থাকে না এই সকল পর্যটক কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরী যাতে পর্যটকেরা নিরাপত্তা পায়। এবং পর্যটকদের মাঝে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় যাতে পর্যটকেরা নির্ভয় ও নিঃসংকো যে ভ্রমনে যেতে পারে এবং জীবনের নিশ্চয়তা পায়। এবং যাতায়াত ব্যবস্থা ও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা উন্নত করা উচিত যাতে অল্প টাকায় ভালো মানের খাবার খেতে পারে ভ্রমণ পিপাসু প্রার্থীরা কারণ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণেও পর্যটকদের কাছে ভ্রমণ নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে। 

তাই এ সকল দিক বিবেচনা করে সরকারি ও বেসরকারিভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে পর্যটকদের উৎসাহিত করা যায় পর্যটনকেন্দ্র ভ্রমণে যাওয়ার জন্য কেননা বাংলাদেশের বৃহৎ অর্থনীতি নির্ভর করছে পর্যটন শিল্পের উপর তাই পর্যটন শিল্প যাতে দিন দিন বৃদ্ধি পায় সেই দিকে সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

শেষ কথা : বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প প্রবন্ধ সম্পর্কে

প্রিয় বন্ধুরা অনেক ধৈর্যের সাথে আর্টিকেলটি পড়ে শেষ করার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনারা অবশ্যই জানেন যে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য স্থাপত্য কলা ও স্থানীয় আদিবাসীদের বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন ও সংস্কৃতিই হচ্ছে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের প্রধান উৎস। 

এই পর্যটন শিল্পকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং স্থায়ী রূপদান করার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে নীতিমালা প্রয়োগ করা উচিত। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সহযোগিতার ব্যবস্থা করা উচিত যাতে তারা ভ্রমণে উৎসাহিত হয়। কারণ এর মাধ্যমে যেমন বাংলাদেশের মানবিক সংস্কৃতি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পরিচয় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে ঠিক তেমনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চাকা আরো বেশি গতিশীল হবে। 

তো প্রিয় বন্ধুরা আশা করি বুঝতে পেরেছে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প সম্পর্কে। আর্টিকেলটি যদি ভালো লাগে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবে। সকলেই ভাল থাকবে। পরিবারের প্রতি খেয়াল রাখবে-আল্লাহ হাফেজ!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url